Header Ads

Header ADS

বুক রিভিউঃ পথের পাঁচালি

 পথের পাঁচালি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত গ্রামীণ জীবনের বাস্তবতা, নিঃস্ব মানুষের সংগ্রাম, প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং মানবিক সম্পর্কের গভীরতাকে তুলে ধরে। আশা করি এই লেখা আপনাদের উপকারে আসবে।

উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ

পথের পাঁচালি


  • নাম: পথের পাঁচালি
  • লেখক: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
  • প্রকাশকাল: ১৯২৯
  • ধরণ: উপন্যাস (সামাজিক বাস্তবতা, গ্রামবাংলার জীবনচিত্র)

উপন্যাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্যঃ

১। গ্রামবাংলার বাস্তব জীবনের নিখুঁত চিত্রায়ণ
২। অপূর্ব ভাষাশৈলী ও সাহিত্যিক গুণ
৩। মানবিক সম্পর্কের গভীরতা
৪। প্রকৃতির সংবেদনশীল ব্যবহার
৫। দারিদ্র্যের বাস্তবচিত্র।

কাহিনীর সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ

“পথের পাঁচালি” মূলত অপুর গল্প। গল্পের শুরুতে আমরা দেখতে পাই, অপুর বাবা হরিহর রায় একজন দরিদ্র ব্রাহ্মণ, যিনি গ্রামে পুরোহিতের কাজ করেন এবং মাঝে মাঝে জমিদারের নায়েবের দায়িত্ব পালন করেন। অপুর মা সর্বজয়া সংসারের প্রতিটি কাজ সামলান এবং দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেন।

অপু ও দুর্গা—এই দুই ভাইবোনের শৈশবের দুষ্টুমি, প্রকৃতির মাঝে তাদের অবাধ বিচরণ, জীবনের ছোট ছোট সুখ-দুঃখ উপন্যাসে অনন্যসাধারণভাবে ফুটে উঠেছে। দুর্গার স্বপ্ন পূরণ না হওয়া, তার অকালমৃত্যু, বাবার কাজের সন্ধানে শহরে চলে যাওয়া, মায়ের একাকীত্ব—এসবই উপন্যাসকে বেদনাময় করে তোলে।

অবশেষে, হরিহর শহরে কাজ পেয়ে যাওয়ার পর অপু ও সর্বজয়া গ্রামের মায়া ত্যাগ করে শহরের দিকে রওনা হয়। এভাবেই শেষ হয় উপন্যাসটি, কিন্তু রেখে যায় অসংখ্য অনুভূতি।

প্রধান চরিত্রসমূহঃ

  1. অপূর্ব (অপু) – উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র, যার শৈশব ও কৈশোরের জীবনচিত্র গল্পের মূল উপাদান।
  2. দুর্গা – অপুর বড় বোন, চঞ্চল, উদার ও প্রকৃতিপ্রেমী মেয়ে, যার মৃত্যু কাহিনীতে এক গভীর বেদনাবোধ সৃষ্টি করে।
  3. সর্বজয়া – অপু ও দুর্গার মা, যিনি দারিদ্র্যের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করেন এবং সন্তানের সুখের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন।
  4. হরিহর রায় – অপুর বাবা, একজন দরিদ্র ব্রাহ্মণ, যিনি ধর্মীয় কাজ করেন এবং সংসার চালানোর জন্য নিরন্তর চেষ্টা করেন।
  5. ইন্দির ঠাকরুন – অপুর দূর সম্পর্কের বৃদ্ধা দাদীমা, যিনি দরিদ্র ও অসহায়, কিন্তু শিশুদের প্রতি তার ভালোবাসা প্রবল। তাঁর প্রসঙ্গ ধরে ‘বল্লালী বালাই’ বা ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে।

উপন্যাসের জনপ্রিয় উক্তি ও সংলাপঃ


বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পথের পাঁচালি” কেবলমাত্র একটি গল্প নয়, এটি বাংলা সাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় রচনা। এতে অনেক দার্শনিক ও আবেগপূর্ণ উক্তি রয়েছে, যা পাঠকদের হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলে। নিচে কিছু জনপ্রিয় উক্তি দেওয়া হলো—


১। “মা ছেলেকে স্নেহ দিয়া মানুষ করিয়া তোলে, যুগে যুগে মায়ের গৌরবগাথা তাই সকল জনমনের বার্তায় ব্যক্ত। কিন্তু শিশু যা মাকে দেয়, তাই কি কম? সে নিঃস্ব আসে বটে, কিন্তু তার মন-কাড়িয়া-লওয়া হাসি, শৈশবতারল্য, চাঁদ ছানিয়াগড়া মুখ, আধ আধ আবোল-তাবোল বকুনির দাম কে দেয়? ওই তার ঐশ্বর্য, ওরই বদলে সে সেবা নেয়, রিক্ত হাতে ভিক্ষুকের মতো নেয় না।”


২। “জীবন বড় মধুময় শুধু এইজন্য যে, এই মাধুর্যের অনেকটাই স্বপ্ন ও কল্পনা দিয়া গড়া। হোক না স্বপ্ন মিথ্যা, কল্পনা বাস্তবতার লেশশূন্য; নাই বা থাকিল সবসময় তাহাদের পিছনে স্বার্থকতা; তাহারাই যে জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ, তাহারা আসুক, জীবনে অক্ষয় হোক তাহাদের আসন; তুচ্ছ স্বার্থকতা, তুচ্ছ লাভ।”


৩। ” সে পথের বিচিত্র আনন্দ রঙের অদৃশ্য তিলক তোমার ললাটে পরিয়েই তো তোমায় ঘরছাড়া করে এনেছি, চল এগিয়ে যাই।”


“পথের পাঁচালি” বাংলা সাহিত্যের একটি অমর সৃষ্টি। এটি শুধু বাংলা ভাষার সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিশ্বসাহিত্যের মানদণ্ডেও অন্যতম সেরা উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃত। বিভূতিভূষণের লেখনী সহজ, সাবলীল এবং বাস্তবধর্মী।

সত্যজিৎ রায় এই উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে ১৯৫৫ সালে “পথের পাঁচালি” সিনেমা নির্মাণ করেন, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসা লাভ করে এবং ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।


No comments

Powered by Blogger.